চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর উপায় | চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয়
দিন দিন চুল পড়ে যাচ্ছে এর করনীয় কি? এই পোষ্টে জানাবো চুল ঘনো, কালো এবং মজবুত করতে সাহায্য করে এমন ১০টি খাবারের কথা বলবো, তারপর বলবো কোন তেল ও ভিটামিন ট্যাবলেট নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আর শেষে থাকছে চুলের যত্ন নিয়ার সঠিক উপায় এবং আধুনিক চিকিৎসা নিয়ে পরামর্শ।
চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায়
চুলের যত্নে ১০টি খাবার তালিকাঃ
চুল পড়া বন্ধ করার খাবার
নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়
১০. বাদাম
যেমন চিনা বাদাম, কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম ও পেস্তা বাদাম এগুলোতে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বিষেস করে ওমেগেছিচ ফ্যাট যা চুলের গোড়া মজবুত করতে ও লম্বা করতে সাহায্য করে। এই ওমেগ্যাছিচ ফ্যাট আমাদের শরীরে নিজে থেকে তৈরি করতে পারে না খাবার থেকে নিতে হয় এটার অভাবে মাথার চুল পড়ে যায়, চুলের রঙ হালকা হয়ে যায়। তাই প্রতিদিনের নাস্তায় কিছু বাদাম রাখতে পারেন, তবে অনেক পরিমানের খাবেন না এতে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
৯. হলুদ সবজি ও ফলমূল
যেমন, মিষ্টি আলু, আম, গাজর, পেঁপেঁ এবং মিষ্টি কুমড়া এগুলো ভিটামিন এ তে ভরপুর। চুলের গোড়া অর্থাৎ যেখান থেকে চুলটা বড় হয় সেইটা ঠিকমত কাজ করার জন্য দরকার ভিটামিন এ, এবং সেইটার খুব ভাল উৎস হলো এই হলুদ আর কমলা রঙের ফল ও সবজি দিনের যতটুকুন ভিটিমিন এ দরকার আদাখান গাজরে তার অর্ধেকেরও বেশী হয়ে যায়। তাই দিনে কিছু হলুদ ফল ও সবজি খেতে চেষ্টা করবেন।
৮. তৈলাক্ত মাছ
প্রচালিত একটা ধারনা আছে যে ওমেগ্যাটিক ফ্যাট এর জন্য সামুদ্রিক মাছই খেতে হবে যেমন, টুনা, সাইমন তবে আমাদের দেশী মাছ যেমন, ইলিশ, কই, মলা এবং চাপিলা এগুলোতেও ওমেগ্যাটিক ফ্যাট আছে, এগুলোর মধ্যে আপনার যেই মাছই খেতে সুবিধা হয় আপনি সেই মাছই খাবেন এগুলো চুল ঘনো কালো করতে সাহায্য করে সাথে প্রোটিন এরও উৎস।
৭. ডিম
সুন্দর চুলের জন্য ডিম আপনার ভালো বন্ধু। তা কেনো বুঝিয়ে বলছি, আমাদের চুল সর্করা বা ফ্যাটের তৈরি না চুল প্রায় পুরোটাই প্রোটিনের তৈরি আর খাবারে প্রোটিনের অভাব হলে নিশ্চিত চুল পড়ে যায়। কিন্তু দেখা যায় আমাদের অনেকের খাবারেই যথেষ্ট পরিমান প্রোটিন থাকে না। কারন আমরা সাধারনত শুধু ভাতটাই বেশী খাই, তাই সুন্দর চুল পেতে খাবারের তালিকায় ডিম রাখবেন সাথে ডিমের আরো কিছু বোনাস আছে যেমন, বায়োটিন, স্যালিনিয়াম, ভিটামিন বি ইত্যাদি। এগুলো চুল ঘনো, কালো এবং সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
নতুন চুল গজানোর উপায়
৬. পালং শাক
চুলের উপকারে পালং শাক একটি চমৎকার খাবার এতে চারটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে যা চুলের ভিতর থেকে পুষ্টি যোগায় ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন এবং ফ্লুট এই সব গুলোই চুলের ঘন, কালো, সুন্দর চুলের জন্য প্রয়োজন।
৫. ডাল
সুন্দর চুলের জন্য ডাল খুবই উপকারী, এতে প্রোটিন আছে ভালো পরিমানের আয়রন আছে আয়রন আমাদের মাথার তালুতে রক্ত সরর্বাহ করে চুলের গোড়ায় অক্সিজেন পৌছাতে সাহায্য করে। গবেষণায় জানা যায় আয়রনের অভাবে নিশ্চিত চুল পড়ে।
সুন্দর চুলের জন্য ডালের আরো কিছু বোনাস আছে, যেমন জিংক, ফ্লেট খুব পাতলা ডাল না খেয়ে ঘন করে রান্না করে খেলে এই পুষ্টি উপাদান গুলো বেশী করে পাবেন।
৪. বিভিন্ন ধরণের বীজ।
যেমন, চিয়াচিস বিচি, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, তিশির বীজ এগুলোতে সুন্দর চুলের জন্য বিভিন্ন চমৎকার উপদান রয়েছে। যেমন চিয়াচিস বীজে আলতো এনুমেনিয়া এসিড এক প্রকারের ওমেগা থ্রি ফ্যাট। মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে জিংক, সূর্যমুখী বিচিতে আছে বায়োটিন, তিসির বিচে আছে সেলেনিয়াম।
গবেষণায় চুল পড়ার সাথে এগুলোর অভাবে সম্পর্ক আছে। এগুলো কিভাবে খেতে পারেন? ভাত খাওয়ার সময় তরকারির উপর বীজ গুলো চিটিয়ে নিতে পারেন। রাতে টক দই অল্প দুধের সাথে চিয়াচিস মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। সকালে কিছু ফলের সাথে খেতে পারেন।
৩. ছোলা
ছোলায় চুলের জন্য তিনটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। আয়রন, জিংক এবং প্রোটিন এই তিনটার যেকোন একটার অভাবে চুল পড়তে পারে। তাই চুল সুন্দর রাখতে মাঝে মাঝে খাবারে ছোলা রাখতে পারেন।
২. টক দই
টক দই প্রোটিন এর আরেকটি উৎস। সাথে চুলের উপকারের জন্য আরো কিছু উপদান আছে যেমন, জিংক। প্রোটিনের জন্য মুরগির মাংস ভালো খাবার।
১. টক ফল
যেমন, কমলা, মাল্টা, লেবু এগুলোতে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন সি আছে। সুন্দর চুলের জন্য ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সি এর অভাবে চুল বেকিয়ে পেছিয়ে যায়। আবার ভিটামিন সি এর অভাব হলে শরীর আয়রন শোসন করতে পারে না এর ফলে চুল পড়ে যায়। শরীর নিজে থেকে ভিটামিন সি বানাতে পারে না তবে টক জাতীয় ফল খেলে সহজেই শরীর সেখান থেকে ভিটামিন সি নিয়ে নিতে পারে। যেমন একটা কমলা থেকেই দিনের প্রায় ৮০% চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। যারা একটু টক কম খেতে পারেন তাদের জন্য টমেটো, পেয়ারা এই ফল গুলো ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হতে পারে।
এই ১০ প্রকার খাবার চুলের ভিতর থেকে পুষ্টি দিবে।
মেয়েদের নতুন চুল গজানোর উপায়
চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয়
এখন বলবো বাহির থেকে পুষ্টি দিয়ার জন্য কি ব্যবহার করবেন।
চুল পড়া বন্ধ করার তেল
নতুন চুল গজানোর তেলের নাম
১. কদুর তেল
চুল পড়ে যাচ্ছে এমন রোগিদের উপর এক গবেষণা করে জানা গেছে, এই তেলটা তিন মাস ব্যবহার করার পর তাদের নতুন করে চুল গজিয়েছে আর আগের থেকে চুল মোটা হয়েছে। তাই কদুর তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আপনি যেকোন ব্রান্ডের কদুর তেল ব্যবহার করতে পারেন, তাতে চুল পড়া ঠেকাতে পারে।
এখন আসি চুল পড়া ঠেকাতে কোন ভিটামিন ট্যাবলেট বেশী কার্যকর?
চুল পড়া বন্ধ করার ভিটামিন
বাজারে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ট্যাবলেট বিক্রি হয়, অনেক চমকপ্রদ কথা বার্তা লেখা থাকে সেগুলোতে তবে রেশীর ভাগ ট্যাবলেটই বৈজ্ঞানিক বিত্তি নেই, অযথা টাকার অপচয় হয়। চুলের জন্য বেশীর ভাগ পুষ্টি উপদান আলাদা ট্যাবলেট এর চেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে আসলেই ভালো হয়।
তবে এই ক্ষেত্রে একটা ব্যতিক্রম আছে সেটা হলো ভিটামিন ডি, খাবার থেকে পর্যাপ্ততা পরিমান ভিটামিন ডি পাওয়া খুব কঠিন, ভিটামিন ডি পাওয়ার সহজ উপায় হলো রদে সময় কাটানো, কিন্তু যাদের পক্ষে এইটা সম্ভন নয় তারা আলাদা করে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে পারেন।
ভিটামিন ট্যাবলেট এর ব্যপারে একটু সর্তক থাকবেন কারন যেমন অতিরিক্ত ট্যাবলেট নিলেএ চুল পড়তে পারে যেমন ভিটামিন এ ট্যাবলেটের ফলে চুল পড়ে যায় কিন্তু আপনি হলুদ রঙের সবজি খেয়ে শরীরে যতই ভিটামিন এ ঢুকান না কেনো তাতে কোনো ক্ষতি নেই।
শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্ন
এখন বলবো চুলের কমন কিছু ভূল নিয়ে?
চুল পড়া বন্ধ করার প্যাক
১. অনেকে শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না এটা চুলের জন্য ক্ষতিকর। কারনটা বুঝিয়ে বলি আমাদের চুল ভালো থাকার জন্য কিছু তেলের প্রয়োজন হয় যা মাথার তালু থেকে এমনিতেই আসে। কিন্তু আমরা যখন শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুই তখন সেই তেলটাও ধুয়ে চলে যায়। কন্ডিশনার কাজ হলো তেল গুলে চুলে আবার ফেরত আনা, তাই প্রতিবারে চুলে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
২. ভেজা চুল ঘষে ঘষে মুছবেন না।
আমরা অনেকেই গোসল করে তোয়ালে দিয়ে একদম ঘষে ঘষে চুল মুছি, এতে চুল নষ্ট হয়। এমন না করে তোয়ালে দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে দিয়ে পানি বের করবেন।
৩. ভেজা চুল আচড়াবেন না।
এতেও চুল নষ্ট হয় চুল খুব কুকড়া না হলে একটু শুকিয়ে যাওয়ার পর চওড়া দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আচড়াবেন।
৪. কোন আধুনিক পদ্ধতির সাহায্যে চুল শুকাবেন না, চুল বাতাসে শুকিয়ে নিয়া সবচেয়ে ভালো। আধুনিক পদ্ধতি যদি ব্যবহার করতেই হয় তবে তা সপ্তাহে এক বারের বেশী ব্যবহার করবেন না এবং খুব কম হিটে ব্যবহার করবেন।
৫. চুল খুব টাইট করে বাঁধবেন না, যারা খুব টাইট করে চুল বেঁধে রাখেন সেই টানের কারনে চুল পড়তে পারে।
শেষে বলছি চুল পড়ার চিকিৎসা
চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ
কিছু কিছু রোগের কারনে চুল পড়তে পারে যেমন, থাইর্রাড রোগ, রক্ত শূন্যতা আপনার যদি খাবার দাবার ঠিক থাকে চুলের যত্ন নিচ্ছেন ঠিক মত তাও যদি চুল পড়ে তাহলে একজন চিকিৎসরের পরামর্শ নিবেন এতে তিনি ক্ষতিয়ে দেখতে পারবেন কোনো রোগের কারনে এমন হচ্ছে কিনা রোগ ধরা পড়লে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা যাবে।
মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ
চুল পড়ার অন্যতম একটি কারন হলো Androgenetic Alopecia নামক একটি রোগ, এই রোগে ছেলেদের মাথায় সাধারনত টাক পড়া শুরু করে এছাড়াও কপালের দুই পাশ থেকেও চুল পড়ে যেতে পারে।
মেয়েদের সাধারনত টাক হয় না কিন্তু চুল পাতলা হয়ে যায় মাথায় সিঁতি বড় হয়ে যায়। এই দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসা আছে দুইটা ঔষুধই ভালো কাজ করে ঔষুধ গুলোর নাম মিনাক্সসিডল আর ফ্যানাইস্টাল চিকিৎসরের পরামর্শ নিবেন তিনি দেখতে পারবেন আপনার এই রোগটি হয়েছে কিনা আর কোন ঔষুধে ভালো হতে পারে।